গ্যাংটক ভ্রমণ

পাহাড়ে যাবো ! পাহাড়ে যাবো ! প্ল্যান করতে করতেই উৎসাহে ফুটছি । 

1বিজয়া দশমীর রাত্রে গ্যাংটক যাত্রা শুরু হলো ।  নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গাড়ি ভাড়া করে সোজা পেলিং গেলাম। ড্রাইভার বেশ হাসি খুশি মানুষ। নাম পাসাং ভুটিয়া। রাস্তায় আবার ধস নেমে বন্ধ ছিল। ফলে ঘুরে যেতে হল এবং বেশ দেরি হল। এক্সট্রা টাকাও খরচ হল। ঝামেলা!

পাহাড়ি রাস্তা। উঁচু নিচু উঁচু নিচু। বেশ কিছু বাঁক বেশ খতরনাক। উল্টোদিক থেকে গাড়ি আসছে কিনা দেখাও যায় না।  আর এরা হর্ন খুব কম ব্যবহার করে। আর কম ব্যবহার করে প্লাস্টিক। দোকানপাটে জিনিসপত্র কিনলে কাপড়ের ব্যাগে দেয়। রাস্তাঘাটে প্লাস্টিক ছড়াচ্ছে দেখলাম টুরিস্টরাই। বলতে লজ্জা করছে, বেশী নোংরা করছে বাঙালিরাই।

DSCN0694যাইহোক পেলিঙে হোটেলে পৌঁছাতে বেশ দেরী হয়ে গিয়েছিল। তবে তার আগে চারধাম ভিজিট করে নিয়েছি। বিশাল শিবমূর্তি আর মন্দির আছে। রাস্তায় প্রচুর ঝর্ণা দেখেছি। কলকাতার রাস্তায় যেমন দুই পা অন্তর অন্তর টাইমকল আছে, ওখানে সেরকম কলের মতো ঝর্না। কি পরিষ্কার জল তার!
আর রাস্তার পাশে বাঁদর বসে থাকে। বড় বড়ো লোমওয়ালা ভুটানি কুকুর ঘুরে বেড়ায়।  রাস্তার একদিকে দেওয়ালের মতো পাহাড়, আরেক দিকে খাদ, নিচে তিস্তা।

DSCN0729 হোটেলে পৌঁছে সটান ঘুম। পরেরদিন সকালে হোটেলের ব্যালকনি থেকে বরফে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখলাম।
তারপর ব্রেকফাস্ট সেরে সাইট সিয়িং শুরু। রিম্বি ওয়াটারফল, কাঞ্চনজঙ্ঘা ওয়াটারফল। তারপর সিংশোর ব্রিজ — এশিয়ার সেকেণ্ড হায়েস্ট ঝুলন্ত ব্রিজ। ( প্রথম কোনটা জিজ্ঞেস করলে বলতে পারবো না। )
তারপর গেলাম খাছেওপালরি লেক। (এরম কিছু একটা উচ্চারণ হবে। ঠিক জানি না।)

DSCN0826 20131016_163947 DSCN0904 4

20131017_063303

20131017_071144

পরের দিন সকালে পেলিং-এর পাহাড়ি রাস্তায় মর্নিং ওয়াক করতে বেরিয়েছিলাম। দারুণ লাগছিল । আঁকা-বাঁকা রাস্তা নিচে নেমে গ্যাছে। একদিকে অন্ধকার আর একদিকে সবে সূর্য উঠছে। কাঞ্চনজঙ্ঘার বরফ গলছে একটু একটু । রাস্তার দুপাশে ঘন জঙ্গল।  অন্ধকার । গম্ভীর ।  সজীব ।  ডাকছে ,আয় আয় আয় আয়।  পাহাড়ের কোলে ফাঁকা জায়গায় কয়েকটা বাড়ি নিয়ে একটা পাড়া। বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েরা বাগানে গাছে জল দিচ্ছে। রাস্তা দিয়ে কেউ গেলে হাত নাড়ছে। পেলিং জায়গাটা খুব ভালো লেগে গিয়েছিলো।

DSCN1040DSCN0959

পেলিং থেকে গ্যাংটক শহর । রাস্তায় দেখেছি বুদ্ধ পার্ক। আর টেমি টি গার্ডেন।গ্যাংটক শহরটা তুলনামূলক ঘিঞ্জি আর নোংরা। শহর বলে কথা। লাল মার্কেট নামে একটা বড় মার্কেট আছে। হরেক কিসিমের জিনিস পাওয়া যায়। শীতের জামাকাপড় আর বুদ্ধমূর্তিই বেশী। কিনছেও হরেক কিসিমের মানুষ। এখানেও হুজুগে বাঙালী।
“ওই দেখো কম্বল! আরে দেখ দেখ টুপি ! টুপি!”
“ভাইসাব এই সোয়েটারটা কিতনেমে দেগা ?”
“রংটা দেখেছিস!”

DSCN1177 DSCN1150 DSCN1136 22

ভালো মোমো আর সুপ পাওয়া যায় বাজারে।

মোড়ে মোড়ে কসমেটিক্সের দোকানের মতো মদের দোকান। কলকাতার থেকে অনেক কম দাম। লোকজন ঢালছে আর খাচ্ছে। খাচ্ছে আর ঢালছে।

তারপরের দিন গেলাম গনেশ তক, হনুমান তক। তক মানে নাকি মন্দির। এরপর নাম্বিতে ইনসটিটিউট অব টিবেটোলজি। তিব্বতি ইতিহাসের নিদর্শন আছে। ছবি তোলা মানা ওখানে। লেখা থাকা সত্ত্বেও দুজন হিন্দুস্থানী ছেলে ছবি তুলতে গিয়ে সিকিউরিটির কাছে কষে ধমক খেলো।

এরপর দেখেছি দো-দ্রুল মনেস্ট্রি। রুমতেক মনেস্ট্রি, রাঙ্কা মনেস্ট্রি। বিভিন্ন রঙের কাপড়ে মন্ত্র লিখে পতাকার মতো টাঙিয়ে রাখার রীতি আছে। ওঁদের বিশ্বাস, হাওয়ায় ওই মন্ত্র ভেসে ভেসে পবিত্র রাখে আর অশুভ শক্তিকে দূরে রাখে।

পাহাড়ী লঙ্কা বিক্রি হচ্ছে দেখলাম। লাল লাল, ঝাল ঝাল।

DSCN1392 DSCN1236 DSCN1424 33 20131019_132217DSCN1519

এসব করতে করতেই এক সপ্তাহ কখন কেটে গেছে টেরি পাই নি। আবার ট্রেন ধরে ব্যাক টু হোম।  কলকাতা কলকাতা ।

Leave a comment